জয়নুল আবেদীন পার্কের ব্রহ্মপুত্র পাড়ের মিশুক রিক্সা চালক হাসেম হত্যাকান্ডের ৩৬ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন এবং লুন্ঠিত সেই মিশুক রিক্সাটি উদ্ধার করা হয়। সে সাথে চালক হাসেম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ৪ ঘাতকসহ গ্রেফতার ০৭ করা হয়েছে।
গত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ সকালে ময়মনসিংহ জয়নুল আবেদীন পার্ক সংলগ্ন সিভিল সার্জনের বাসভবনের উত্তর পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের কিনারায় হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামা এ লাশটিকে তার আত্মীয়-স্বজন সনাক্ত করেন। অজ্ঞাতনামা সেই মৃত ব্যক্তিটির নাম হাসেম মিয়া (২৯) যিনি পেশায় একজন মিশুক রিক্সাচালক। পরবর্তীতে এ ঘটনায় মৃত ব্যক্তির ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেন।
ময়মনসিংহ জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ এর নেতৃত্বে হাসেম হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্যে মাঠে নামেন। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কোতোয়ালী ও গৌরীপুর থানা এলাকা থেকে উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় সরাসরি জড়িত মোঃ আলমগীর (২০), মোঃ রাকিবুল হাসান তপু (৩০), মোঃ রাকিব হাসান ওরফে রাকিবুল ইসলাম (২১) এবং মোঃ আরাফাত হোসেন বাবু (২৭) নামের মোট ০৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকান্ডের ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত মর্মে জানান। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ রাত ৯টার দিকে আলমগীর, রাকিবুল হাসান তপু, রাকিবুল, আরাফাত হোসেন বাবু ও পলাতক অপর একজন সহ মোট ৫ জন একত্রে শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ স্মৃতিসৌধের মাঠে বসে একটি অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক অনুমান রাত ১২ টার সময় তারা শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ হতে মৃত হাসেমের মিশুক রিক্সা ভাড়া করে সার্কিট হাউজ মাঠে নিয়ে যায় যায়। তারপর সার্কিট হাউজ মাঠে দাঁড়িয়ে মিশুক রিক্সা চালক হাসেমের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তারা এলোপাথাড়ি মারপিট করে বেড়িবাঁধের নিচে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। আসামী আলমগীরের কোমরে পরিহিত বেল্ট দিয়ে আসামী রবিন চালক হাসেমের পা বাঁধে এবং গেঞ্জি দিয়ে আরাফাত হোসেন বাবু ভিকটিমের হাত বাঁধে। আরাফাত হোসেন বাবু চালক হাসেমের পরনের চাদর দিয়ে তার মুখ বাঁধে এবং সবাই মিলে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রাখে। এরপর আরাফাত হোসেন বাবুর পকেটে থাকা চাকু দিয়ে পলাতক রবিন ভিকটিমের বুকে ও পেটে একাধিক আঘাত করে এবং তাকে মাটিতে ফেলে রেখে সবাই দ্রত মৃত হাসেমের মিশুক রিক্সাটি নিয়ে শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ এলাকায় গিয়ে আলমের কাছে নগদ ৩৪০০০ টাকায় বিক্রি করেন। পরে মিশুক বিক্রির টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। এ ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ৪ জন সহ মিশুক ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত আরো ৩ জন, ফরহাদ (৩১), সুমন শেখ (৩৫) এবং আলম (৪০) সহ মোট ০৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন >> সড়ক দূর্ঘটনায় এসআই মনিরুজ্জামান এর মৃত্যু
উক্ত আসামীদের নামে আগে থেকে বেশ কয়েকটি চুরি ছিনতাই এর মামলা রয়েছে । উল্লেখ্য, রাকিবুল ইসলাম তপু চরপাড়া মেডিকেল এর সামনে সংঘটিত শরিফ হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী ছিলেন। উক্ত মামলায় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছিলেন এবং ১৯ মাস জেলে থেকে গত ০২ মাস আগে জামিনে বের হন। পলাতক আসামী গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানা যায়।