ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা ময়মনসিংহ জেলা ১৭৮৭ সালের ১মে গঠিত হয়। বাংলাদেশের পুরাতন জেলাগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ অন্যতম জেলা।
ময়মনসিংহ জেলার তথ্য:
বিবরণ | তথ্য |
---|---|
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ময়মনসিংহ |
জেলা | ময়মনসিংহ |
জেলা ঘোষণা | ১লা মে ১৭৮৭ |
জনসংখ্যা | ৫৮,৯৯,০৫২ |
সাক্ষরতার হার | ৭০.৭৪% |
ময়মনসিংহ জেলা : ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং পরিবর্তনের এক অদ্বিতীয় গল্প
ময়মনসিংহ, বাংলাদেশের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জেলা, যার গৌরবময় অতীত সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিশ্রণে পরিপূর্ণ।
ইতিহাসের পাতায়:
- নসরৎসাহী নামে পরিচিত এই এলাকাটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে ১৭৮৭ সালের ১লা মে ময়মনসিংহ জেলায় পরিণত হয়।
- রাজস্ব আদায়, প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে স্থানীয় বিদ্রোহ দমন ছিল এর পেছনের প্রধান কারণ।
- বেগুনবাড়ির কোম্পানিকুঠি ছিল জেলার প্রাথমিক কার্যালয়। পরবর্তীতে, ১৭৯১ সালে সেহড়া মৌজায় স্থানান্তরিত হয়।
- সময়ের সাথে সাথে, ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন অংশ সিলেট, ঢাকা, রংপুর এবং পাবনা জেলার অংশে পরিণত হয়।
- ১৮৪৫ সালে জামালপুর, ১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জ, ১৮৬৯ সালে টাঙ্গাইল এবং ১৮৮২ সালে নেত্রকোণা মহকুমা গঠন করা হয়। পরবর্তীতে, সবকটি মহকুমা জেলায় উন্নীত হয়।
শহরের উত্থান:
- ১৮১১ সালে, ময়মনসিংহ শহর প্রতিষ্ঠিত হয়।
- মুক্তাগাছার জমিদার রঘুনন্দন আচার্য শহরের জন্য জায়গা দান করেন।
- ১৮৮৪ সালে, রাস্তায় প্রথম কেরোসিনের বাতি জ্বালানো হয়।
- ১৮৮৬ সালে, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথ এবং ১৮৮৭ সালে জেলা বোর্ড গঠন করা হয়।
ময়মনসিংহ কেবল একটি জেলা নয়, এটি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পরিচয়ের এক অপূর্ব মেলবন্ধন।
ময়মনসিংহ জেলার অবস্থান:
এটি বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত, চারপাশের জেলার সাথে বৈচিত্র্যময় সীমানা ভাগ করে নেয়।
উত্তরে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা ময়মনসিংহের প্রাকৃতিক দৃশ্যের মনোরম পরিবেশ প্রদান করে।
দক্ষিণে, গাজীপুর জেলা ময়মনসিংহের সাথে সংযোগ স্থাপন করে ঢাকা বিভাগের সাথে।
পূর্বে, নেত্রকোণা জেলা এবং কিশোরগঞ্জ জেলা ময়মনসিংহের সাথে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন শেয়ার করে।
পশ্চিমে, শেরপুর জেলা, জামালপুর জেলা এবং টাঙ্গাইল জেলা ময়মনসিংহের সাথে ভৌগোলিক এবং প্রশাসনিকভাবে সংযুক্ত।
ময়মনসিংহ জেলার প্রশাসনিক বিভাগ:
ময়মনসিংহ জেলা একটি বিশাল ও জনবহুল এলাকা, যা ৩৩ টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট একটি সিটি কর্পোরেশন, ১৩ টি উপজেলা, ১৪ টি থানা, ১০ টি পৌরসভা, ১৪৭ টি ইউনিয়ন, ২১০১ টি মৌজা, ২৭০৯ টি গ্রাম এবং ১১ টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।
উপজেলা সমূহ:
এ জেলা মোট ১৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপজেলাসমূহের নাম হলো- গফরগাঁও, ময়মনসিংহ সদর, হালুয়াঘাট, মুক্তাগাছা, ভালুকা, ফুলপুর, ত্রিশাল, গৌরীপুর, ধোবাউড়া, ঈশ্বরগঞ্জ, ফুলবাড়িয়া, তারাকান্দা ও নান্দাইল।
আরও পড়ুন >> ময়মনসিংহে কামাল হত্যা মামলার প্রধান আসামী আটক
ময়মনসিংহের সংস্কৃতি:
ময়মনসিংহ, বাংলাদেশের একটি জেলা যা তার সমৃদ্ধ লোক সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং বিশ্বসাহিত্যের অবদানের জন্য বিখ্যাত।
লোকসংস্কৃতির এক অমূল্য ভাণ্ডার:
- ময়মনসিংহ লোক উৎসব, লোকসংগীত এবং লোকগাঁথার জন্য বিখ্যাত।
- পালার গান, যা ময়মনসিংহের লোকসংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, মহুয়া, চন্দ্রাবতী, দেওয়ানা মদিনা এবং আরও অনেক বিখ্যাত গানের মাধ্যমে সারা বিশ্বে পরিচিত।
- মলুয়া, কমলা, দেওয়ান ভাবনা, দস্যু কেনারামের পালা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা, কাজলরেখা ইত্যাদি পালাগুলি ময়মনসিংহের লোকসংস্কৃতির সমৃদ্ধি প্রকাশ করে।
বিশ্বসাহিত্যের অবদান:
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন ময়মনসিংহের লোকগান সংগ্রহ করেছিলেন এবং “মৈমনসিংহ গীতিকা” নামে একটি সংকলন প্রকাশ করেছিলেন।
- এই সংকলনটি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় অনুবাদ হয়ে বিশ্বসাহিত্যের খ্যাতি অর্জন করে।
- মৈমনসিংহ গীতিকা বাংলা সাহিত্য এবং বিশ্বসাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।
ময়মনসিংহ কেবল একটি জেলা নয়, এটি লোকসংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং বিশ্বসাহিত্যের এক অপূর্ব মেলবন্ধন।