স্মৃতির পাতায় কিংবদন্তী রাজনীতিক ভাষা সৈনিক এম শামছুল হক এমপি

২৭ মে ২০২৩ কিংবদন্তী রাজনীতিক ভাষা সৈনিক এম শামছুল হক এমপি-র মৃত্যু দিবস। ময়মনসিংহের রাজনৈতিক অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র বলা হয়ে থাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা এম শামছুল হক মহোদয়কে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঘনিষ্ট সহচর বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাষা সৈনিক এম শামছুল হক এমপি (১৯৩০–২৭ মে ২০০৫) দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ও তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৫ ও ময়মনসিংহ-২ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।এম শামছুল হক ১৯৩০ সালের ২৯ জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

ভাষা সৈনিক এম শামছুল হক এর রাজনৈতিক জীবন : ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ শহরে মিছিল শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মর্মান্তিক ঘটনা ওই মিছিলে শামছুল হকের পাশে থাকা তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু অমলেন্দু বাবু পুলিশের গুলিতে শহীদ হন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঘনিষ্ট সহচর এম শামছুল হক ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ঐতিহাসিক ৬-দফা ও ১১-দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগঠক ও যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় বলিষ্ট ভূমিকা রাখেন। তাঁর সরব উপস্থিতি প্রজন্মের কাছে এক অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি ১৯৭০ সালের তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ময়মনসিংহ-১৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ময়মনসিংহ-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৮৮ সালে ফুলপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯৬ সালে পাট মন্ত্রণালয়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন।

 

ভাষা আন্দোলন : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন ময়মনসিংহের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ আনন্দমোহন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় তাঁকে ময়মনসিংহ শহরের স্টেশন রোড থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি এ-সময় ৬ মাস কারাগারে কাটান। ময়মনসিংহ শহরে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন।

তখন কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে মিছিল-মিটিং, পথসভা, পোস্টারিং, লিফলেট বিতরণসহ নানামুখী আন্দোলনের তিনি নেতৃত্ব দেন।

 

পরিবার : এম শামছুল হকের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শরীফ আহমেদ ময়মনসিংহ-২ আসন থেকে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের মন্ত্রীসভায় শরীফ আহমেদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

স্থাপনা : তাঁর কীর্তিকে স্মরণ করে ময়মনসিংহ শহরের টাউন হল সংলগ্ন ভাষা সৈনিক শামসুল হক মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে।

 

একুশে পদক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষা সৈনিকদেরকে পূর্ণমূল্যায়ন করে দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান জনপ্রিয় নেতা এম. শামছুল হককে ২০২১ সালের অমর একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করেছেন।

 

শেখ হাসিনার উক্তি : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর এম শামসুল হক সম্পর্কে তাঁর জীবদ্দশায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিখ্যাত উক্তি ছিল ‘শামছুল হক না থাকলে সংসদ জমে না।’

আরও পড়ুন >> ময়মনসিংহে বৃক্ষমেলা শুরু : চলবে মাসব্যাপী

জননেতা শামছুল হকের বিখ্যাত উক্তি : ‘কইছি কইছিই। একটাও কমাবো না।’বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিরূপণে এম শামছুল হক ৩০ লক্ষের স্থলে ৩০ কোটি বলে ফেলায় স্বাধীনতা বিরোধীরা যখন শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বিতর্ক বাঁধাতে চান তখন তাদের জবাবে এম শামছুল হক উপরোক্ত বিখ্যাত উক্তি প্রকাশ করেন।

শেয়ার করুন :

One thought on “স্মৃতির পাতায় কিংবদন্তী রাজনীতিক ভাষা সৈনিক এম শামছুল হক এমপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *