ময়মনসিংহের আলোচিত সৌরভ হত্যা কান্ড অর্থাৎ চার খন্ড লাশের রহস্য উন্মোচন হয়েছে, হত্যাকারী চাচা ও তার শ্যালক গ্রেফতার এবং আলামত উদ্ধার করা হয়।
গত ২ জুন তারিখ সকাল অনুমান সাড়ে আটটার সময় ময়মনসিংহের মনতলা ব্রীজের নিচে সুতিয়া নদীতে নিচে পানিতে ভাসমান অবস্থায় একটি লাগেজ ও নদীর পাড়েই একটি মানুষের মাথা দেখতে পেয়ে স্থানীয় জনতা থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ঘটনাস্থল হতে মানুষের মাথা ও পাশেই পানিতে ভাসমান লাগেজ উদ্ধার করে লাগেজ খুলে চার টুকরো এক অজ্ঞাত যুবকের খন্ডিত অংশ পাওয়া যায়।
থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশে অন্যান্য বিশেষায়িত ইউনিট পিবিআই, সিআইডি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে লাশের পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা করেন। কিন্তু তাৎক্ষণিক লাশের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। লাশের পরিচয় সনাক্তের জন্য বিভিন্ন ইলেট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ জেলা পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুকে সংবাদ পোষ্ট করা হয়। এরপর লাশটিকে ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।
পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যাকান্ডের বিষয়ে সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নিহত যুবকের আত্নীয় স্বজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে উপস্থিত হয়ে নিহত যুবকের পরিচয় সনাক্ত করেন। সনাক্তকৃতদের পরিচয় থেকে জানা যায় ছেলেটির নাম ওমর ফারুক সৌরভ এবং ছেলেটি প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে পড়ালেখা করছিল।
তথ্য প্রযুুক্তি ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে আলোচিত সৌরভ হত্যা কান্ডের মূল হত্যাকারী চাচা ইলিয়াছ আলী, শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক এবং গাড়ীচালক আব্দুল হান্নান আকন্দ কে গত ৪ জুন ঢাকা ও ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থেকে থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করেন ।
আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যায়, আসামী ইলিয়াছ ও নিহত ওমর ফারুক সৌরভ পরস্পর আপন চাচা ভাতিজা। আসাামি ইলিয়াছ এর মেয়ে ইভা আক্তারকে নিহত ওমর ফারুক সৌরভ (২৪) গোপনে বিবাহ করে। ইভার ওমর ফারুক সৌরভ এর সাথে বিবাহের পূর্বে অন্যত্র বিবাহ হয়েছিল। বিষয়টি পরবর্তীতে ইভার বাবা মা জানলে তা নিয়ে পরিবারে বিবাদের সৃষ্টি হয় এবং এই বিবাহ কোনক্রমেই মেনে নিবে না বলে জানায়। এই ঘটনা নিয়ে ইলিয়াছ এর আপন ভাই ইউসুফ এর সাথে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। দুইজনের মধ্যে বাক বিতন্ডা হয় এবং ওমর ফারুক সৌরভকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আসামী ইলিয়াছ তার মেয়ে ইভাকে গত মে মাসের ১৬ তারিখ পড়াশুনার জন্য কানাডা পাঠায়।
গত ২ জুন বিকালে নিহত ওমর ফারুক সৌরভ ময়মনসিংহ আসে এবং চাচাতো ভাই মৃদুল (আসামী ইলিয়াছ এর ছেলে) কে ফোন দিলে, মৃদুল সৌরভকে গোহাইলকান্দী প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন বাসায় আসতে বলে। সৌরভ বাসায় গেলে চাচা ইলিয়াছ বাসার নিচ তলায় একটি ভাড়া করা কক্ষে নিয়ে হাত পা বাঁধে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ইলিয়াছ এর শ্যালক আহাদুজ্জামান ফারুক কে ফোন করে ময়মনসিংহ বাসায় ডেকে নিয়ে আসে এবং এক পর্যায়ে দুজন মিলে সৌরভকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে মাথায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে লাশ বাথরুমে রাখে।
লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী ময়মনসিংহের গাংগিনার পাড়ের দোকান থেকে লাগেজ ব্যাগ, পলিথিন ও হ্যান্ডগ্লাভস কিনে বাসায় নিয়ে যায়। বাথরুমে রাখা সৌরভ এর মৃত দেহের শরীর হতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা এবং দুই পায়ের ঊরু বিচ্ছিন্ন করে পলিথিনে প্যাকেট করে লাগেজের মধ্যে রাখে। মাথাটি স্বচ্ছ পলিথিনে মুড়িয়ে একটি শপিং ব্যাগে রাখে। এরপর রাত আনুমানিক সাড়ে বারোটার সময় লাগেজ ও শপিং ব্যাগে রাখা মৃতদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে আসামী ইলিয়াছ আলী ও আহাদুজ্জামান ফারুক একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে প্রাইভেটকারের ব্যাগ ডালার ভিতরে নিয়ে কোতোয়ালী মডেল থানাধীন মনতলা ব্রীজের উপর হতে সুতিয়াখালী নদীতে ফেলে দেয়।
আরও পড়ুন >> মুক্তাগাছার মনতলা ব্রীজে যুবকের চারখন্ড দেহ উদ্ধার
আজ ৪জুন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আলোচিত সৌরভ হত্যা কান্ডের এসকল তথ্য জানা যায়।