“শিল্পাচার্য” অভিধান উচ্চারণ করলেই যার চেহারা ভেসে উঠে চোখে, আজ ২৯ ডিসেম্বর সেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এর জন্মবার্ষিকী।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ মহকুমার কেন্দুয়ায় বাবা তমিজ উদ্দিন আহমেদ এবং মা জয়নাবুন্নেছার কোল আলো করে ১৯১৪ সালের এই দিনে জন্ম নেন এই খ্যাতিমান শিল্পী। মৃত্যু ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন :
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। মাত্র ষোল বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি বন্ধুদের সাথে কলকাতায় গিয়েছিলেন শুধু গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস দেখার জন্য। কলকাতা গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস ঘুরে আসার পর সাধারণ পড়াশোনায় জয়নুল আবেদিনের মন বসছিল না। তাই ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক (ম্যাট্রিক) পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং মায়ের অনুসমর্থনে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন। তার মা জয়নুল আবেদিনের আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার তখনকার আর্ট স্কুলে ভর্তি হতে সাহায্য করেন। জয়নুল আবেদিন ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে পড়েন। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবনে তিনি গভর্নমেন্ট আর্ট ইন্সটিটিউটের (স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় নামকরণ করা হয়) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষের আসন অলংকার করেন ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও আগ্রহেই বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালে সোনারগাঁওয়ে লোকশিল্প জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে।
কর্মবহুল জীবনের অসংখ্য চিত্রকর্মের মাঝে দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী, নৌকা, ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে গ্রামবাংলার উৎসব নিয়ে ৬৫ ফুট দীর্ঘ বিখ্যাত ছবি “নবান্ন”, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে “বীর মুক্তিযোদ্ধা”, “ম্যাডোনা”, ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে “মনপুরা-৭০” বিশেষ উল্লেখযোগ্য৷ অনুমান করা হয় তাঁর চিত্রকর্মের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি।
আরও পড়ুন : এটি একটি স্বপ্ন ছিল: মরিয়ম আফিজা
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংগৃহীত তার শিল্পকর্মের সংখ্যা ৮০৭। বেঙ্গল ফাউন্ডেশানের সংগ্রহে আরও প্রায় পাঁচশত চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে। তার পরিবারের কাছে এখনও চার শতাধিক চিত্রকর্ম সংরক্ষিত। ময়মনসিংহের সংগ্রহশালায় রক্ষিত চিত্রকর্মের সংখ্যা ৬২। এছাড়া পাকিস্তানের বিভিন্ন সংগ্রহশালায় তার বিপুল পরিমাণ চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে।