শুভ জন্মদিন ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশন

১৮৮৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের অন্যতম পুরোনো এবং ব্যবসাসফল ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশন এর। এই জংশটির মাধ্যমে প্রতিদিন প্রচুর আন্তঃনগর, কমিউটার এবং লোকাল ট্রেনের যাতায়াত হয়ে থাকে।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন ইতিহাস

১৮৮৫ সালে ময়মনসিংহের সঙ্গে ঢাকার সংযোগ স্থাপন করার জন্য নারায়ণগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট রেলপথ স্থাপন করা হয়। ১৮৮৫ সালে ঢাকা স্টেট রেলওয়ে দ্বারা নারায়ণগঞ্জ – ঢাকা – ময়মনসিংহ ১৪৪ কিমি দীর্ঘ মিটার গেজ রেল লাইন উন্মোচন করা করা হয় । মুলত এই সেকশন তৈরি করার প্রধান কারণ হল অত্র অঞ্চলেরকাঁচা পাট ও পাটজাতীয় পণ্য নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পরিবহন করা এবং পানি পথে কলকাতায় স্থাপিত পাটকলের কাঁচা মাল হিসাবে সরবরাহ করা । এই রেলপথ ১৮৯৪ সালে জামালপুর পর্যন্ত, ১৮৯৯ সালে সরিষাবাড়ী উপজেলার জগন্নাথগঞ্জ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। ১৯১২ সালে জামালপুর থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ করা হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৮৬ তারিখে ময়মনসিংহে রেলওয়ে জংশনটি যাত্রা শুরু করে। কালের পরিক্রমায় শতবর্ষী এ জংশন স্টেশন রেল সেবা দিয়ে যাচ্ছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও আশেপাশের জেলাগুলোতে। জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ বর্তমানে মিটারগেজ সিংগেল লাইন বিদ্যমান রয়েছে। জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ হয়ে বাহাদুরাবাদ ঘাট, শম্ভুগঞ্জ গৌরিপুর হয়ে জারিয়া ঝাঞ্জাইল, মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ হয়ে ভৈরব রেল যোগাযোগ চালু রয়েছে। ২০২১ সালে রেলপথ মন্ত্রী ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলওয়ে জংশনটিকে আধুনিকায়নের ঘোষণা দেন।

বর্তমানে ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনটি বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে এই দুই অঞ্চল (পূর্ব-পশ্চিম) থেকে চার অঞ্চলে বিভক্ত করার কথা জানিয়েছেন। রেলওয়ের চারটি বিভাগ হলে ময়মনসিংহ এবং ঢাকা অঞ্চল মিলে মধ্যাঞ্চল গঠিত হবে যার সদর দপ্তর হবে ময়মনসিংহে। আশা করা যায় যায় এর মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনা এবং ময়মনসিংহের রেলপথ ও ট্রেনের উন্নতি ঘটবে। ইতিমধ্যে ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনের সংসদ সদস্য জনাব মোহিত উর রহমান শান্ত জাতীয় সংসদে ময়মনসিংহের স্টেশন এবং রেলপথ শহরের বাইরে করার একটি প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পেশ করেছেন।

আরও পড়ুন >> ময়মনসিংহে ২য় জাতীয় শিশু চিত্রকলা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত

অনন্য বৈশিষ্ট্য

ময়মনসিংহ জংশন এর একটা ইউনিক জিনিস দেখা যায় । সেটা হোল লুপ । বাংলাদেশে কোথাও রেল লুপ দেখা যায় না। একটা লাইন ঢাকা থেকে এসে ময়মনসিংহ জংশনে ঢুকে যায় । আর একটা লাইন ঢাকা লাইন উপর দিয় আড়াআড়ি ভাবে চলে যায় ব্রহ্মপুত্র নদের দিকে । ময়মনসিংহ জংশন থেকে লাইন বের হয়ে ডান দিকে গিয়ে আসতে আসতে উপরে উঠা করে, তারপর বাম দিকে কার্ভ হয়ে আরও উঠে লুপ হয়ে ঢাকা লাইনের উপরে দিয়ে ক্রস করে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর স্থাপিত শম্ভুগঞ্জ রেল ব্রিজ হয়ে গৌরিপুরের দিকে চলে যায় । এই সেকশন দিয়ে কিশোরগঞ্জ / ভৈরব বাজার, গৌরীপুর, শ্যামগঞ্জ, নেত্রকনা/মোহনগঞ্জ, জারিয়া ঝাঞ্জাইল যাওয়া যায় । উত্তর দিকে জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ বাজার/বাহাদুরাবাদ ঘাট, সরিষাবাড়ি, ভুয়াপুর, বিবিইস্ট চলে গেছে ।

 

এছাড়াও বাংলাদেশে শুধুমাত্র ময়মনসিংহই রেলওভার ব্রীজ দেখা যায়। একটি ট্রেনের উপর দিয়ে আরেকটি ট্রেন যাওয়ার দৃশ্যটি দেখতে আপনাকে অবশ্যই ময়মনসিংহে আসতে হবে।

ময়মনসিংহবাসীর দাবী

ময়মনসিংহ বাসীর দীর্ঘ দিনের প্রানের দাবি ময়মনসিংহ – সিলেট আন্তঃ নগর ট্রেন । বহু বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলনের পরেও ট্রেন পায়নি ময়মনসিংহবাসী । তাদের মতে অন্যান্য এলাকায় এর থেকে কম আন্দোলনে ট্রেন পেয়েছে সে এলাকার নীতি নির্ধারকদের সাফল্যজনক ভাবে আন্দোলনে সম্প্রিক্ত করতে পেরে ।

এছাড়াও সম্প্রতি বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টার্টিং স্টেশন জামালপুর না করে ময়মনসিংহতেই রাখার দাবীতে বেশ কয়েকবার আন্দোলন করা হয়েছিল। তবে আশানুরূপ ফলাফল পায়নি আন্দোলনকারীরা।

ময়মনসিংহবাসীর মতে ময়মনসিংহ জংশন অন্যতম প্রাচীন স্টেশন হওয়া সত্ত্বেও আধুনিকতার ছোয়া এখনো পায় নি স্টেশনটি। বিগত সালে শুধুমাত্র প্লাটফর্ম উচু করন এবং ছাউনি পরিবর্তন বাদে তেমন বড় কোনো কাজ চোখে পড়ে নি।

তবে তারা এখনও আশা করে এ অঞ্চলে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি পাবে ভবিষ্যতে, স্টেশন রি মডেলিং হবে, এক সময় ডুয়ালগেজ লাইন বসলে ব্রডগেজ ট্রেনের আনাগোনা দেখা যাবে ব্যস্ততম এ প্রাচীন জংশনে। ময়মনসিংহ অঞ্চলের গর্ব ময়মনসিংহ জংশন, শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ জংশন স্টেশন আধুনিকায়ন করে ময়মনসিংহ জয়দেবপুর ডাবল লাইন করা এখন সময়ের দাবী।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *