সাধারণ পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়ে নৌবাহিনীর পরিচয়ে বিয়ে করেছে ১৩ টি এবং সেই সাথে পরিবারগুলোর কাছ থেকে প্রায় ৫০ লক্ষেরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেয় এক প্রতারক চক্র।
ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখা কর্তৃক দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌবাহিনীর সদস্যের পরিচয় দিয়ে সাধারণ পরিবারের মোট ১৩ জন মেয়েকে বিয়ের মাধ্যমে অর্ধ কোটিরও বেশী টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ০২ সদস্য গ্রেফতার এবং প্রতারণার কাজে ব্যাবহৃত ভূয়া আইডি কার্ড ও ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি উদ্ধার করা হয়। আসামী মইদুলের প্রতারণার জাল থেকে রক্ষা পায়নি এক প্রতিবন্ধী মেয়ে। সেই প্রতিবন্ধী মেয়েকেও বিয়ের ফাঁদে ফেলে তার কাছ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতাও নিয়ে নেয়ার কথা জানা যায়।
গ্রামের সাধারণ মুসলিম পরিবারের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদেরকে নিজেদের সাজানো ঘটকের মাধ্যমে বিবাহের প্রস্তাব পাঠানো এবং নিজেদেরকে নৌবাহিনীর সদস্য হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ধর্মীয় রীতিতে বিবাহের মাধ্যমে এসব পরিবারের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার এক অপকৌশল রচনা করে আসছিল। এই সংক্রান্তে এক ভুক্তভোগী ময়মনসিংহ জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে ০৫জন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলে তাঁর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে একটি চৌকষ দল গাজীপুর জেলার চন্দ্রা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
এই প্রতারক চক্রের মূল হোতা মোঃ মহিদুল ইসলাম মইদুল এবং কুদ্দুস আলীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা শাখা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এমএলএসএস হিসেবে ০২ বছর চাকরি করার পর বিধি বহির্ভূতভাবে বাল্য-বিবাহ করার অপরাধে চাকরিচ্যুত হয়ে আসামী মহিদুল প্রতারণার মাধ্যমে বিবাহকেই তার পেশা হিসেবে বেঁছে নেয়। এই কাজে বিজিবি থেকে চাকরিচ্যুত এক সদস্য তাকে সরাসরি সহায়তা করে। গ্রেফতারকৃত অপর আসামী কুদ্দুছসহ অন্যান্যরা কখনও ঘটক কখনও মহিদুলের নিকট আত্মীয় হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে অভিভাবকদের বিশ্বাস অর্জন করে এবং প্রতারণার অপকৌশল বাস্তবায়নে সংঘবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করে। এখন পর্যন্ত মহিদুল নৌবাহিনীর পরিচয়ে বিয়ে করেছে ১৩ টি মহিলাকে যার মধ্যে মানিকগঞ্জের ০৩ জন, টাঙ্গাইলের ০৩ জন, কিশোরগঞ্জের ০১ জন ও ময়মনসিংহের ০৬ জন রয়েছে।
আরও পড়ুন>> পুলিশ সুপার ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ২০২৪ এর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত
মহিদুলের এই চক্র এসব পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লক্ষেরও অধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমনকি তার এই প্রতারণার ফাঁদ থেকে প্রতিবন্ধী নারীও রেহাই পায়নি। আসামী মহিদুলের কাছে নৌবাহিনীর ভূয়া আইডি কার্ড, বাহিনীর ব্যবহার্য ট্রাকস্যুট এবং বিভিন্ন বাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত ছবি পাওয়া গেছে। মহিদুল সহ অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে জামালপুর ও টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় একাধিক প্রতারণা মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। আসামীদের দ্রুত বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত প্রতারক চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের নিমিত্তে অভিযান অব্যাহত আছে। এ সংক্রান্তে পুলিশ সুপার, ময়মনসিংহ মহোদয়ের কার্যালয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।