লোহার কুঠির – ময়মনসিংহের ইতিহাস ঘেরা এক নিদর্শন

আলেকজান্ডার ক্যাসল বা লোহার কুঠির ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত একটি ঊনবিংশ শতকীয় প্রাসাদ। আলেকজান্ডার ক্যাসল ময়মনসিংহ শহরের প্রাচীন স্থাপনাসমূহের মধ্যে অন্যতম। শহরের কেন্দ্রস্থরে কোর্ট-কাঁচারীর কাছে এটির অবস্থান।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর

এই স্থাপনাটি লোহার কুঠির নামে বহুল জনপ্রিয়। ১৮৭৯ সালে লোহা দিয়ে এই ক্যাসেলটিকে তৈরি করা হয় হবে একে লোহার কুঠির বলা হয়ে থাকে।১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত ময়মনসিংহ জেলার প্রতিষ্ঠা শতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে মহারাজা সুকান্ত সুর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন।১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রাসাদটি নির্মিত হয়। এতে সে সময় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। ভবন নির্মাণে লৌহের ব্যবহারের কারণে এটি জনসাধারণ্যে “লোহার কুঠি” নামেও পরিচিত ছিল। বর্তমানে এটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের গ্রন্থাগার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।তৎকালীন ভারত সম্রাট সপ্তম অ্যাডওয়ার্ডের পত্নী আলেকজান্দ্রার নামানুসারে ভবনটির নাম করা হয়েছিল ‘আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল’। পরবর্তীতে লোকমুখে এটি আলেকজান্ডার ক্যাসেল বা লোহার কুঠির বলে পরিচিতি পায়।

নির্মান :

১৮৭৯ সালে ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এ জমিতে নির্মাণ করা হয় বাংলো আদলের সুরম্য বাগানবাড়ি লোহার কুঠি বা আলেকজান্দ্রার ক্যাসেল। ক্যাসেলের ভেতরে ছিলো শ্বেত পাথরের ফ্লোর। নির্মাণের পর নানা রাজকীয় আসবাবে ভবনটি সুসজ্জিত করা হয়েছিল। ভবন চত্বরের রয়েছে দীঘি ও বাগান। ঘরগুলোতে রয়েছিল ততকালীন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যাবস্থা। ক্যাসেলটির চারপাশের কোনায় চারটি বিশাল লোহার পাইপের মতো রয়েছে যার মাধ্যমে কুঠিরের সকল কামড়ায় শীতল বাতাস বইত। এছাড়াও মূল ফটকের সামনের দিকের দুইপাশে দুইটি মুর্তি রয়েছে।আগে ভবনটির সামনে ও চারপাশে ছিল ফোয়ারা, ছিল ৯টি ভাস্কর্য। লোহার ভবন, অসংখ্য ব্রোঞ্জ ও পাথরের ভাস্কর্য এবং দুর্লভ প্রজাতির গাছের কারণে এই ভবন ঘিরে তৈরি হয়েছিল এক অনন্য মোহনীয় পরিবেশ। নজরদারির অভাবে ভাস্কর্যগুলো কোনোটার অঙ্গহানি হয়েছে, কোনোটা চুরি হয়ে গেছে। ভবনের লোহার পাত, পিলার কিংবা রডগুলোতে রঙের আঁচড় পড়েনি বহুদিন। দোতলা পুরোপুরি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে ভবনটির আশপাশে একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও এর প্রাকৃতিক ও নিরিবিলি পরিবেশ এখনো দর্শনার্থীদের মনে অন্যরকম শান্তি এনে দেয়।

images-1

আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে ১৯৪৮ সালে ২৭ দশমিক ১৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। প্রথমে শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তী সময়ে কলেজে বেশ কয়েকটি সুবিশাল ভবন নির্মিত হলে ক্যাসেলের দোতলায় স্থানান্তরিত হয় শিক্ষকদের বাসভবন। তৎপরর্বীতে গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল। ৮ কক্ষ বিশিষ্ট ভবনে রয়েছে প্রায় ১৫,০০০ গ্রন্থ। একসময় আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলের চারপাশে দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীর থাকলেও পরবর্তীতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কর্তৃপক্ষ অবাধ যাতায়াত ও সংরক্ষণে একটি অংশে তারের বেড়া স্থাপন করলেও সিংহভাগ রয়ে গেছে অরক্ষিতই।

বরেণ্য ব্যক্তিদের পদার্পণ :

বহু বরেণ্য ব্যক্তি এই প্রাসাদে অবস্থান করেছেন। মহারাজার আমন্ত্রণে ১৯২৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহে আসেন। সেসময় কবির সফরসঙ্গী ছিলেন তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী, দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ইতালির অধ্যক্ষ জোসেফ তুচি প্রমুখ। ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিন কবি গুরু সূর্যকান্তের বাগান বড়ি আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থান নেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে অবস্থানকালে একটি বিশালাকার বৃক্ষতলে বসে অনেক কবিতা রচনা করেছেন। একই বছর মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন। এখানে আরো পদার্পণ করেছিলেন লর্ড কার্জন, চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা, মৌলভী ওয়াজেদ আলী খান পন্নী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখ।

কীভাবে যাবেন:

মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার সরাসরি বাস আছে। সড়কপথে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে সময় লাগবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। সকালে রওনা দিলে সারা দিন ময়মনসিংহে ঘুরে বেড়িয়ে সন্ধ্যা নাগাদ আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে পারবেন। ভালোভাবে ঘুরে দেখতে চাইলে দুইদিন সময় নিয়ে যাওয়াটা ভালো। তবেই মন ভরে উপভোগ করতে পারবেন ঐতিহ্যের এ শহরকে।

আরও পড়ুন : শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন উদ্যান ও সংগ্রহশালা

অবস্থান: ময়মনসিংহ সদর, ময়মনসিংহ। যোগাযোগের মাধ্যম- সড়ক পথে যাওয়া যায় (ব্যক্তিগত যানবাহন/রিক্সা) ভাড়া-আনুমানিক ৩০ টাকা সময়-আনুমানিক ৩০ মিনিট।

শেয়ার করুন :
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *