নকশিকাঁথার জামালপুর | ইতিহাস, নামকরণ, দর্শনীয় স্থান

নকশিকাঁথার জামালপুর বাংলাদেশের একটি অন্যতম জেলা হিসেবে পরিচিত। জামালপুর জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয় ২০১৫ সাল থেকে। চলুন জেনে আসি জামালপুর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য!

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর

জামালপুর জেলার ইতিহাস

১৮৪৫ সালে ময়মনসিংহ জেলার অধীনে জামালপুর মহকুমা গঠিত হয়। ১৮৫৫ সালে জামালপুর মহকুমার সিরাজগঞ্জ থানাকে পাবনার সাথে যুক্ত করা হয়। ১৮৬৬ সালে রংপুর জেলা হতে দেওয়ানগঞ্জ থানাকে জামালপুর মহকুমায় যুক্ত করা হয়। ১৮৭৯ সালে টাঙ্গাইল মহকুমা গঠিত হলে মধুপুর সহ বেশ কিছু এলাকা জামালপুর মহকুমা হতে টাংগাইল মহকুমার সাথে যুক্ত হয়। ১৯১২ সালে বঙ্গভঙ্গের পর লর্ড কার্জন জামালপুরকে জেলা করার ঘোষণা দেন। ১৯১৭ সালে এই জেলা গঠনের উদ্দেশ্যে বৃটিশ সরকার জমি অধিগ্রহণ করে। পরবর্তীতে ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭৮ সালে ময়মনসিংহ থেকে আলাদা করে জামালপুরকে বাংলাদেশের ২০ তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে জামালপুর জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়।

জেলার নামকরণ

অনেকে এ অঞ্চলকে “গঞ্জের হাট” নামে উল্লেখ করলেও এ নাম সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য জানা যায় নি। সেন বংশের রাজত্বকালে কৌলিন্য প্রথা প্রচলনের ফলে এ অঞ্চলে হিন্দু বসতি গড়ে উঠে এবং ধর্ম-কর্ম পালনের একটি শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ মন্দিরে সাধু-সন্ন্যাসীদের আগমন ঘটে যে কারনে অনেকে জামালপুরের পুর্বনাম “সন্ন্যাসীগঞ্জ” নামে উল্লেখ করেন। আবার ১৭৭৯ সালে সার্ভেয়ার জেনারেল মি. রোনাল্ড ভূমি পরিমাপ করে যে মানচিত্র তৈরি করেন সেখানে জামালপুর মৌজার নাম “সিংজানী” উল্লেখ করেন। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায় দিল্লির সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে হযরত শাহ জামাল (রহ.) নামে একজন ধর্ম প্রচারক ইয়েমেন থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ২০০ অনুসারী নিয়ে এ অঞ্চলে আসেন। ধারণা করা হয়, হযরত শাহ জামাল (রহ.) এর নাম অনুযায়ী এ অঞ্চলের নাম জামালপুর হয়।

জেলা সম্পর্কিত তথ্য

  • প্রতিষ্ঠা : ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭৮
  • সীমানা : উত্তরে ভারতের মেঘালয়, কুড়িগ্রাম ও শেরপুর, দক্ষিণে টাঙ্গাইল পূর্বে শেরপুর ও ময়মনসিংহ এবং পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলা
  • আয়তন : ২,১১৫.১৬ বর্গ কিমি
  • জনসংখ্যা : ২৪,৯৯,৭৩৮ জন
  • সাক্ষরতা : ৬১.৫৩ শতাংশ
  • ঘনত্ব : ১১৮২ জন (প্রতি বর্গকিমি)

প্রশাসনিক কাঠামো

  • উপজেলা : ৭টি – জামালপুর সদর, বকশিগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি।
  • থানা : ৭টি
  • পৌরসভা : ৮টি
  • ইউনিয়ন : ৬৮টি
  • জাতীয় সংসদের আসন : ৫টি

মুক্তিযুদ্ধে জামালপুর

মুক্তিযুদ্ধের জামালপুর ১১ং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে জামালপুর জেলা হানাদার মুক্ত হয়ঃ- বকশিগঞ্জ (৫ডিসেম্বর), দেওয়ানগঞ্জ (৬ডিসেম্বর), ইসলামপুর (৭ডিসেম্বর), মেলান্দহ (৯ডিসেম্বর), জামালপুর সদর (১০ ডিসেম্বর), মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি (১২ ডিসেম্বর)

নদনদীর সমূহ

এই জেলার উপর দিয়ে প্রবাহমান নদনদীগুলোর নাম হলো : যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদ, জিঞ্জিরাম, কয়ড়া, চাতাল, তেঘরিয়া, ঝিনাই প্রভৃতি।

উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান সমূহ

সদর : শাহ জামাল (রহ.) এর মাজার, রাজা হরিশচন্দ্রের দিঘী, শোলাকুড়ি পাহাড়।

বকশিগঞ্জ : ধনুয়া কামালপুর স্থলবন্দর, গারো পাহাড়।

সরিষাবাড়ি : যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, প্রজাপতি পার্ক, দ্বিজেন শর্মা উদ্ভিদ উদ্যান।

ইসলামপুর : যমুনা নদী

দেওয়ানগঞ্জ : যমুনার পাড়, জিল বাংলা সুগার মিলস লিমিটেড।

মাদারগঞ্জ : ঐতিহ্যবাহী খরকাবিল

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

এ জেলায় অসংখ্য জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের জন্ম, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ মেজর খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম ও ২নং সেক্টর কমান্ডার), সৈয়দ সদরুজ্জামান (বীর প্রতিক), মিজানুর রহমান খান (বীর প্রতিক), আনিছুর রহমান (বীর প্রতিক), আতিউর রহমান (বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর), হাসান হাফিজুর রহমান (কবি ও সাংবাদিক), আব্দুল্লাহ আল মামুন (অভিনেতা ও নাট্যকার), আনোয়ার হোসেন (অভিনেতা) ইত্যাদি।

আরও পড়ুন >> ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাভিত্তিক জনসংখ্যা বিশ্লেষণ

নকশীকাঁথা ও হস্তশিল্প

কাপড়ের উপর যে নকশা করে কাঁথা তৈরি করা হয় তাকে নকশীকাঁথা বলা হয়। আবহমানকাল থেকেই বাংলার ঘরে ঘরে মেয়েরা বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মনের মাধুরি মিশিয়ে কাপড়ের উপর নকশা করে যে কাঁথা বোনেন তাই নকশীকাঁথা। জামালপুরের নকশীকাঁথা আগে থেকেই সারাদেশে প্রশংসিত। গুনগত মান উন্নত এবং দাম তুলনামূলক কম হওয়ার দেশ ও দেশের বাইরে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নকশীকাঁথা শিল্পের জিনিসের মধ্যে রয়েছে : নকশীকাঁথা, বেড কভার, থ্রী পিছ, কুশন কভার, শাড়ি পাঞ্জাবি ইত্যাদি।

উউল্লেখ্য সকল তথ্যই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগৃহীত। তাই উল্লেখ্য বিষয় ছাড়াও যদি৷ আরও সংশোধন অথবা সংযোজন করতে হয় তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিন। আমরা যাচাই করে সেটির সংযোজন বা সংশোধন করে দিবো।

শেয়ার করুন :
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *