অধ্যক্ষ মতিউর রহমান (জন্ম ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২) বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫ জানুয়ারি ২০১৪ নির্বাচনে বিজয়ী দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করে। ১২ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ৬ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বে গঠিত তৃতীয় মন্ত্রিসভায় মতিউর রহমান ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তাকে ২০২২ সালে একুশে পদক প্রদান করা হয়। আজ তার জন্ম দিবস।
জন্ম : ১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের আকুয়ায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। তার পিতার নাম মৃত আবদুর রেজ্জাক এবং মাতার নাম মৃত মেহেরুন্নেসা খাতুন।
শিক্ষা জীবন : ১৯৫৩ সালে তার প্রাথমিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে আকুয়া মডেল প্রাইমারি স্কুল থেকে। এরপর ১৯৫৪ সালে তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর নকলা উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্পন্ন করেন অষ্টম শ্রেণি। তারপর ১৫৫৮ সালে ময়মনসিংহের মৃত্যুঞ্জয় স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। মেট্রিকের পর ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এবং উক্ত কলেজ থেকেই তিনি ১৯৬৪ সালে বিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
রাজনৈতিক জীবন : মতিউর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ঢাকা হল বর্তমানে ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হলের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সাংগঠনিক জীবনে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান দুইবার ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ১৯৯৬ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মোট ১৮ বছর দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্য হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে জননেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ১৪৯ (ময়মনসিংহ-৪) আসন থেকে ১৯৮৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে তিনি জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম সংসদে তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ি কমিটি’র সভাপতি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র সম্মানিত সদস্য, জাতীয় সার সমন্বয় ও বিতরণ কমিটি’র সদস্য, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ১৯৯৬ সনে একবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার এবং ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরপর তিনবার সিন্ডিকেট মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্বাধীনতার পর থেকে মোট তিনবার ময়মনসিংহ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মতিউর রহমান রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন সময়ে কারাবরণ করেন।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ সন পর্যন্ত দুই মেয়াদে দীর্ঘ ২৩ মাস কারাবরণ করেন। তিনি ২০০২ সালে ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলার মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেন। শতপ্রলোভনের মুখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি অবিচল থেকে তিনি তাঁর সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অকৃত্রিম অবদানের জন্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ‘মুজিব দর্শন বাস্তবায়ন পরিষদ’ কর্তৃক ২০০০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পদক’ লাভ করেন।
আরও পড়ুন : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৪
মুক্তিযুদ্ধে অবদান : অধ্যক্ষ মতিউর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক ও সফল সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু যুব শিবিরের ইনচার্জ ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরে তার নেতৃত্বে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বিরম্নদ্ধ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। তার নেতৃত্বে ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ হানাদার মুক্ত হয়।
উল্লেখযোগ্য সম্মাননা :
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান রাজনীতি, শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একাধিক পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ইউনাইটেড কালচারাল কনভেনশন, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ২০০৫ সালে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার’ পদকে ভূষিত হন। এছাড়ও তিনি আন্তর্জাতিক জীবনী কেন্দ্র ইংল্যান্ড কর্তৃক ২০০২ সালে ২১ শতকের অসামান্য বুদ্ধিজীবী’ পদকে ভূষিত হন। তিনি অভিনয়, নাটক, আবৃত্তিসহ নানা প্রকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ১৯৬৭-৬৮ সেশনে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ফুটবল খেলা প্রতিযোগিতায় বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০২২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।