ময়মনসিংহ জেলার পুরাকীর্তি সমূহ এবং সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

ময়মনসিংহ জেলার পুরাকীর্তি রয়েছে ব্যাপক এবং এখনো এই নিদর্শনগুলো এই জেলার বুকে উদীয়মান হয়ে রয়েছে। নিচে এই জায়গা এ স্থাপনাগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণী দেওয়া হলো চাইলে ঘুরে আসতে পারেন আপনিও।

মাথা ভাঙ্গা মঠ :

ময়মনসিংহ সদরের অন্যতম প্রাচীন স্থাপনা কোতুয়ালী থানার পাশের শিব মন্দিরটি। থানা ঘাটের এই মন্দিরটি ‘মাথাভাঙ্গা মঠ’ নামেও পরিচিত। এর চূড়া ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ভেঙ্গে যাবার কারণে এটি মাথা ভাঙ্গা মঠ নামে পরিচিতি লাভ করে। এটিকে অষ্টাদশ শতকের স্থাপত্য বলে কেউ কেউ ধারণা করলেও এর নির্মাণ কালের তথ্য জানা যায়নি।

ব্রাহ্ম উপাসনালয় :

১৮৫৪-এর পর গাঙ্গিনার পাড়ে স্থাপিত হয় ব্রাহ্মদের উপাসনালয়। পরে সেখানে স্থাপিত হয় ময়মনসিংহ ল’ কলেজ। বর্তমানে মূল স্থাপনাটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

শশীলজ :

মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্তের বসতবাড়ি শশীলজ। নিজ পুত্র (ভাতিজা ও দত্তকপুত্র) শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে ঊণবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এটি নির্মিত হয়। বাড়িটি ছিল দ্বিতল ভবন। ১৮৯৭-এর ভূমিকম্পে দ্বিতল ভবনটি ভেঙ্গে যাবার পর বর্তমান বাড়িটি পুননির্মাণ করা হয়। দ্বিতল ভবনের সিঁড়িতে বিশেষ বাদ্যের ব্যবস্থা ছিল। সিঁড়িতে মানুষ চলাচল করলেই সুমধুর বাজনা বাজতো। জানা যায়, প্যারিস থেকে মহারাজা এক লক্ষ (মতান্তরে তিন লক্ষ) টাকা ব্যয়ে স্ফটিক সঙ্গীত বাক্সটি কিনে এনেছিলেন। দ্বিতল শশীলজ ধ্বসে যাবার পর মহারাজা তার এলাকায় দ্বিতল পাকা বাড়ি নির্মাণ নিষিদ্ধ করেন। বিশাল এ বাড়িটিতে আছে অসংখ্য দুর্লভ প্রাচীন বৃক্ষ। বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় (মহিলা) হিসেবে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত।

<<শশীলজ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন>>

গৌরীপুর লজ :

গৌরীপুরের সংস্কৃতিমনা জমিদারের কাষ্ঠ নির্মিত দোতলা বাড়ি এটি। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে খান বাহাদুর ইসমাইল হোসেন সড়কে রাজরাজেশ্বরী ওয়াটার ওয়ার্কস-এর পাশে এর অবস্থান। শোনা যায় দ্বিতল পাকা বাড়ি নির্মাণ নিষিদ্ধ হবার কারণে গৌরীপুরের জমিদার চীন থেকে কারিগর এনে এই কাঠের দোতলা বাড়িটি তার জামাতার জন্য নির্মাণ করেন। বর্তমানে এটি সোনালী ব্যাংক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল :

ময়মনসিংহ শহরের এক উল্লেখযোগ্য স্থাপনা আরেকজান্ডার ক্যাসেল বা আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল। মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী ময়মনসিংহ শহরের জুবলী উৎসব পালনের জন্য তৎকালীন ভারত সম্রাট সপ্তম এডওয়ার্ড-পত্নী সম্রাঞ্জী আলেকজান্দ্রার নামে এই দ্বিতল ভবনটি নির্মাণ করেন। অন্য মতে, ময়মনসিংহের তৎকালীন ইংরেজ কালেক্টর আলেকজান্ডার আই, সি, এস, -এর নামে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভবনটি নির্মাণ করা হয়। এটি মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর বাগানবাড়ি হিসেবে খ্যাত। বর্তমানে এটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় (পুরুষ)-এর লাইব্রেরী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

<<আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন>>

হাসান মঞ্জিল :

ধনবাড়ির জমিদারদের সুদৃশ্য ভবন। রাজ রাজেশ্বরী ওয়াটার ওয়ার্কস- এর পেছনে এ বাড়িতে একসময় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জেলা অফিস ছিল। বর্তমানে ব্যবহার অনুপোযোগী বলে পরিত্যক্ত।
ধলার জমিদারদের বাড়িঃহাসান মঞ্জিলের বিপরীতে একই রাস্তায় অবস্থিত। বর্তমানে সরকারী কর্মচারীদের বাসস্থান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তালজাঙ্গা হাউজ :

কিশোরগঞ্জ জেলার তারাইল উপজেলার তালজাঙ্গার জমিদারদের বসতবাড়ি। সি কে ঘোষ রোড রেলক্রসিং এর পাশে। বর্তমানে আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

চাকলাদার হাউজ :

সেহড়া হোমিও মেডিকেল কলেজ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বর্তমানে।
রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি কালিবাড়ি রোডের বাড়িটি বর্তমানে সরকারী কর্মচারীদের আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বুধা বাবুর দোতলা :

মহারাজা রোডের সুদৃশ্য এ বাড়িতে বর্তমানে সরকারের কৃষি বিভাগের খামার বাড়ির উপপরিচালকের দপ্তর অবস্থিত।

অঘোর বন্ধু গুহের বাড়ি :

শহরের প্রধান সড়ক রামবাবু রোডের এ বাড়িটি বর্তমানে ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মদন বাবুর বাড়ি :

মদন বাবু রোডের এ বাড়িটি বর্তমানে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্বাবধানে যাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মসুয়ার জমিদার বাড়ি :

হরিকিশোর রায় রোডের এ বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের প্রপিতামহ হরিকিশোর রায়ের বাড়ি। বাড়ির আদি নাম ‘পূণ্যলক্ষ্মী ভবন’ বর্তমান পরিবর্তিত নাম ‘দুর্লভ ভবন’। বাড়িটি বর্তমানে কমিউনিটি সেন্টার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এসবস্থাপনা ছাড়াও গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামে বীরঙ্গনা সখিনার মাজার নানান কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে পতিব্রতা সখিনার পিতা দেওয়ান উমর খাঁর বিরুদ্ধে তার স্বামী ফিরোজ খাঁকে (ঈশা খাঁর নাতি হিসেবে পরিচিত) উদ্ধার করার জন্য পুরুষের পোশাক পরে যুদ্ধ করেন বীরনারী সখিনা এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে স্বামীর তালাক দেয়ার সংবাদ পেয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া ১৮৬৭ তে প্রতিষ্ঠিত হয় দূর্গাবাড়ি মন্দির। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহ রামকৃষ্ণ আশ্রম। এছাড়াও আছে দূর্গাবাড়ি সংলগ্ন দশভূজা বাড়ি, জুবলি ঘাটের রঘুনাথ জিউর আখড়া, মহারাজা রোডের কানাই-বলাই মন্দির, কালিবাড়ির জগদ্বন্ধু আশ্রম, মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ির সংলগ্ন শিব মন্দির, আটানি পুকুর পাড়, জোড়া মন্দির, ঈশ্বরগঞ্জ বাজার মন্দির ইত্যাদি।

খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের গীর্জার মধ্যে ময়মনসিংহ আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠের বিপরীতে স্থাপিত ব্যাপ্টিস্ট গীর্জা, ব্রহ্মপুত্র কূল ঘেঁষে সার্কিট হাউসের পাশে অ্যাংলিকন গীর্জা এবং ভাটিকাশর সাধু প্যাট্রিক ক্যাথলিক মিশন শতবর্ষেরও প্রাচীন; হালুয়াঘাট বিরইডাকুনি ক্যাথলিক মিশন (১৯২৮), হালুয়াঘাট উত্তর বাজার অক্সফোর্ড চার্চ (এ্যাংলিকন চার্চ), রাংরাপাড়া গারো ব্যপ্টিস্ট কনভেনশন মিশন, বেতকুড়ি ব্যাথেল চার্চ; ধোবাউড়ার ঘোষগাঁও ভালুকা পাড়া ক্যাথলিক মিশন প্রাচীন স্থাপনার অন্যতম।

এসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ছাড়াও ময়মনসিংহ জেলা সদরের উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে ময়মনসিংহ পৌরসভা ভবন (পুরাতন), মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের বিপরীতে নাটোর জমিদারদের বাসাবাড়ি, ব্রহ্মপুত্র তীরে খানবাহাদুর ইসমাইল রোডে করোটিয়া, আমবাড়িয়া, গৌরীপুর, কালীপুর, গোলকপুর, সুসঙ্গ-দুর্গাপুর, নারায়নডহর প্রভৃতি জমিদারদের বড় বড় বাসাবাড়ি। ধনবাড়ি, ধলা, গাঙ্গাটিয়া, আঠারবাড়ি, ডোহাখোলার জমিদারদের বাসাবাড়ি। বৈলর, তালজাঙ্গা, রামগোপালপুর, কিষ্টপুর, ধিতপুর জমিদারদের বাড়ি, সেহড়ায় চাকলাদার বাড়ি ইত্যাদি।

এছাড়াও আপনার দেখা ময়মনসিংহের আরও যদি পুরাকীর্তি থেকে থাকে তাহলে কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিন তাহলে আমরা সংশোধন/সংযোজন করে দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *