১৯৭১ সালের এইদিনে ময়মনসিংহ পাক হানাদার বাহিনীর থেকে মুক্ত হয় এবং পালিত হয় ময়মনসিংহ মুক্ত দিবস ।১০ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্প ছেড়ে টাংগাইল হয়ে ঢাকা পালিয়ে যায়।
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ১১ নম্বর সেক্টরের এফ জে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ১৩ রাজপুত রেজিমেন্ট ও ৯৫ ব্রিগেডের ৫৭ মাউন্টডিভিশন যৌথভাবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে অবস্থানরত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা করে। পরে মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা হালুয়াঘাট হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা দখলদার পাকিস্তানি সেনারা টিকতে না পেরে পিছু হটে। ভীতসন্ত্রন্ত হয়ে ৯ ডিসেস্বর রাতের আঁধারে পাকবাহিনী ময়মনসিংহ ছেড়ে টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়। তবে পাক সেনারা পালিয়ে যাওয়ার আগে স্থানীয় রাজাকার ও আলবদরদের সহায়তায় অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে। ১০ ডিসেম্বর বিভিন্ন দিক থেকে মুক্তিসেনাদের পাশাপাশি মুক্তিকামী সাধারণ জনতা মিছিল নিয়ে ময়মনসিংহ শহরে জড়ো হন। মুক্ত হয় ময়মনসিংহ।
১৯৭১ সালের এইদিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা ভোরের দিকে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে বিজয়ে মিছিল সহকারে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে স্থানীয় সার্কিট হাউজ মাঠে প্রবেশ করে এই সময় খবর পেয়ে শত-শত মুক্তিকামী নারী পুরুষ ও স্বজনরা রাস্তার দুধারে দাড়িয়ে আনন্দ উল্লাস করে এবং তাদের অভিবাদন জানান। এই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনরা তাদের প্রিয় মানুষদের এক নজর দেখে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। আনন্দের সাথে এই স্বজন হারানোর বেদনার এই দৃশ্যটি ছিল খুবই বেদনাদায়ক ও অভুতপূর্ব। মুক্তিকামী জনতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা সার্কিট হাউস মাঠে উত্তোলন করে ময়মনসিংহকে মুক্ত ঘোষণা করেন। ওই সময় চারদিক থেকে মুক্তিকামী জনতা নারী পুরুষ সার্কিট হাউস মাঠে জড়ো হয় এবং তারা আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে এবং জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত করে তোলে ঐতিহাসিক সার্কিট হাউস মাঠটি।এটি ছিল মুক্ত দিবসের এক বিরল দৃশ্য।
ময়মনসিংহ জেলার প্রায় সকল উপজেলা (নান্দাইল ছাড়া) পাক হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়ে যায় ১০ ডিসেম্বরের ভেতর। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহের কমপক্ষে দেড়শও মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে কয়েকশো পাকসেনা, রাজাকার, আলবদরসহ পাকদোসর নিহত হন। যুদ্ধ চলাকালীন পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা বহু মানুষকে হত্যা করে তাদের মরদেহ বধ্যভূমিতে ফেলে রাখেন।
আরও পড়ুন : ৮ই ডিসেম্বর গৌরিপুর মুক্ত দিবস
এ দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন কর্তৃক ছোট বাজার এলাকায় ৭ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১০ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আয়োজনে উপস্থিত থাকেন ময়মনসিংহের বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে সকল স্তরের মানুষ। শোনা যায় ময়মনসিংহ মুক্ত হবার কাহিনী।