ময়মনসিংহ বিভাগের, নেএকোনা জেলার সুসং দূর্গাপুর, বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড় অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র এখানে বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকরা আসে।
চলুন জেলে আসি ভ্রমণ গাইড সহ দূর্গাপুর ও বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড় এর বিস্তারিত তথ্য।
ময়মনসিংহ ব্রিজ থেকে দূর্গাপুরের দূরত্ব ও কতটুকু সময় লাগবেঃ ময়মনসিংহ ব্রিজ থেকে শ্যামগঞ্জ দিয়ে পূর্বধলা, জারিয়া হয়ে সরাসরি দূর্গাপুর, ৫৫.৫ কিঃমি, সময় লাগবে ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট এর মতো।
বিকল্প রাস্তাঃ
ময়মনসিংহ ব্রিজ থেকে সরাসরি ধোবাউড়া চলে আসবেন, দূরত্ব ৫০ কিঃ মিঃ প্রায়, ধোবাউড়া থেকে পুটিমারি, বিজয়পুর এর দূরত্ব আনুমানিক ২৫ থেকে ২৮ কিঃমি।
ময়মনসিংহ থেকে যেভাবে যাবেনঃ
বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু (শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ নামে পরিচিত) মোড়ে চলে যাবেন,ব্রিজের সামনে থেকে সুসং দূর্গাপুর এর বাসে ওঠে যাবেন, তারপর শ্যামগঞ্জ থেকে ৩৫ কিলোমিটার রাস্তা। বাস এর ভাড়া ৮০ টাকা। বাস থেকে সিএনজি ভ্রমন আরামদায়ক। সময় লাগে মাত্র দেড় ঘন্টা ভাড়া ১৫০ টাকা জন প্রতি। এক সিএনজি তে পাঁচ জন আসা যায়। (ভাড়া কম বেশি হতে পারে)
আরেকটা রুট আছে যা ট্যুরিস্টদের কাছে মোটামোটি ওজানাই এখনো। প্রাইভেটকার কিংবা মাইক্রো দিয়ে যেতে হলে আপনারা ময়মনসিংহ থেকে ধোবাউরা এবং ভেন্নাকান্দা চৌরাস্তা হয়ে শিবগঞ্জ বাজার দিয়ে একেবারে বিজয়পুরের বর্ডার সহ সব জায়গাতেই যেতে পারবেন। এতে আপনারা গাড়ি দিয়ে সরাসরি স্পটে যেতে পারবেন।
Birishiri বিরিশিরির মূল আকর্ষণ বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড় যার বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে-সবুজ পানির হ্রদ। সাদা মাটি পানির রঙটাকে যেন আরো বেশি গাঢ় করে দিয়েছে। তবে বিরিশিরি গিয়েই আপনি এ সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারবেন, সেটা কিন্তু না। আপনাকে যেতে হবে আরেকটু দূর বিজয়পুর চীনা মাটির পাহাড়ে। পাহাড় ও সমভূমি সহ এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৬০০ মিটার। বিস্তর পাহাড় জুড়ে রয়েছে সাদা মাটি। কিছু কিছু জায়গায় লালচে মাটি ও দেখা যায়। পাহাড় থেকে মাটি কাটায় সেখানে হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে যার পানি কোথাও স্বচ্ছ নীল কোথাও সবুজাভ নীল কোথাও বা একদম লাল। তবে লাল পানি এখন নেই বললেই চলে। এই হ্রদের নীল জল যেন আপনার সমস্ত অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে দেবে। আর এসব হ্রদের পানিতে চোখ পড়তেই দেখবেন আসার সব কষ্টগুলো নিমিষেই মিলিয়ে গেছে। শ্বেত শুভ্র চিনামাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে অপরুপ নীলের উৎস সমেশ্বরী নদী। যা বর্তমানে কয়লা খনি হিসেবে পরিচিত। এই নদীর নীল জলে সাদা চিনামাটির পাহাড়ের প্রতিবিম্ব যেন এক অলৌকিক সৌন্দর্যের প্রতীক। এক কথায় অসাধারণ! বিরিশিরি এর সোন্দর্য্য আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেবে সব ব্যস্ততা। এছাড়াও দেখার মত আরো রয়েছে রানীখং গির্জা, কমলা রানীর দীঘি এবং সোমেশ্বরী নদী।
বিরিশিরি কি কি দেখার আছেঃ
বিচিত্রময় সাংস্কৃতিক আবহাওয়া, কংশ-টেপা-সোমেশ্ বরীর কাশবন আর দূরে আকাশে হেলান দিয়ে গম্ভীর গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই সৌন্দর্যপিপাসুদের মন কেড়ে নেয়। বর্ষায় সোমেশ্বরীর তীরবর্তী তীরবর্তী বিরিশিরির সৌন্দর্য বেড়ে যায় অনেক গুণ। পাহাড় থেকে নেমে আসা উত্তাল ঢলের রুদ্ধরূপ বর্ষায় বিরিশিরি ঘুরতে আসা পর্যটকদের দেখায় তার বন্য সৌন্দর্য্য। বিরিশিরিতে রয়েছে পাহাড়ী কালচারাল একাডেমী। এখানকার আধিবাসীদের শতকরা ৬০ ভাগই গারো, হাজং ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর। এখানে আছে টুঙ্কা বিপ্লবের কয়েকটি স্মৃতিস্তম্ভ। হাজং ভাষায় তেভাগা আন্দোলনের আরেক নাম টুঙ্কা বিপ্লব।
তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি কমরেড মনি সিংহের স্মৃতিভাস্কর আছে এখানে। অপেক্ষাকৃত কোলাহলমুক্ত ছোট্ট একটি বাজার। বিরিশিরিতে পা রাখতেই অন্য রকম এক অনুভূতির পরশ বুলিয়ে যায় সারা গায়। এখনে আছে পাহাড়ী কালচারাল একাডেমি। শান্ত-স্নিগ্ধ, সবুজে ঢাকা ছিমছাম পরিবেশ। পর্যটকদের চাপ বেশী থাকেনা। এখানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় সবাই পাহাড়ী-গারো, হাজং। এ ছাড়াও যেতে পথে পড়বে সেন্ট যোসেফের গির্জা। গির্জাটা বেশ সাজানো-গোছানো, নীরব আর খুব সুন্দর।
এছাড়াও দূর্গাপুর থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর সীমান্তে পাহাড়ের চুড়ায় রানীখং গীর্জা অবস্থিত। এই পাহাড়ের চুড়া থেকে বিরিশিরির সৌন্দর্য যেন অন্য মাত্রা পায়।
বিরিশিরি বাজার থেকে ব্যাটারী রিক্সা ভাড়া করে এই চীনামাটির পাহাড়সহ আরো কয়েকটি দর্শনীয় জায়গা ঘুরে দেখা যাবে। পুরো দিনের জন্য ভাড়া পড়বে ৫০০-৬০০ টাকা । পাচ থেকে ছয়ঘন্টা সময়ের ভিতর উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী, রাণীখং চার্চ, সোমেশ্বরী নদী, গারো পল্লী,কমলা বাগান, চীনামাটির পাহাড় ঘোরা হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন : বিপিন পার্ক – ময়মনসিংহের এক পুরোনো ঐতিহ্যবাহী পার্ক
কোথায় থাকবেনঃ
সুসং দুর্গাপুরে থাকার জন্য ভাল মানের বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউস আছে। নিম্নে এদের নাম এবং যোগাযোগ করার নাম্বার দেয়া হল-
জেলা পরিষদ ডাক বাংলোঃ
০১৫৫৮৩৮০৩৮৩, ০১৭২৫৫৭১৭৯৫
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী গেষ্ট হাউজঃ ফোনঃ ০৯৫২৫-৫৬০৪২, মোবাইলঃ ০১৮১৫৪৮২০০৬
ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউসঃ
০১৮১৮৬১৩৪৯৬, ০১৭১৬২৭৭৬৩৭, ০১৭১৪৪১৮০৩৯, ০১৭৪৩৩০৬২৩০, ০১৯২৪৯৭৫৯৩৫, ০১৭২৭৮৩৩৩৩২।